আবু নাবিল ॥
স্বাগত নতুন বছর দুই হাজার একুশ । তোমার শুভাগমনে আমরা স্বাগত জানাই। জানিনা তোমার গর্ভে কি লুকায়িত। আমরা তো প্রতিনিয়ত শংকিত। আমাদের মনের মাঝে নানা জন্জালের পাহাড়সম স্তুপ। তুমি কি পারবে আমাদের মনের মাঝে সে জঞ্জাল ধুয়ে মুছে ছাপ করে দিতে। আমাদের মনের কুৎসিত কালি পরিস্কার করে দিতে? আমাদের মনে হলাহলের স্পর্শে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। বিস্ময়ের আত্মস্বার্থে নোংরামির প্রভাবে। মন এত অপরিচ্ছন্ন হলে পথ চলবো কিভাবে? কিন্তু পথ তো আমাদের দীর্ঘ। এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে আমাদের। তাই তো বলি নতুন বছর তুলি আমাদের মনটাকে নির্মল করে দাও। আলোর মশাল জ্বলে ধরো আমাদের অন্ধকার অমানিষার পথে। আমরা এক ভয়ংকর গর্তের কিনারায় শংকিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। পথ চলতে গিয়ে অন্ধকারে যেন পা পিছলে গভীর গর্তে পড়ে না যাই। নতুন বছর তুমি আমাদের মনটাকে নির্মল করে দাও। আমরা যেন হানাহানি ভুলে যেতে পারি। যেন স্বাচ্ছন্দ্যে পথ চলতে পারি। আমরা এক জাতি একই সম্প্রদায় হয়ে আপনত্ব অনুভূতিতে জাগ্রত করে যেনো এগিয়ে যেতে পারি। যেনো পৌছতে পারি অভিষ্ঠ লক্ষ্যে। স্পর্শ করতে পারি বিজয়ের স্তম্ভ। আমাদের জাতীয় জীবনে নতুন বছরের শুভ আগমনে অনেক প্রত্যাশা যেমন আছে তেমনি আছে আশংকার হাতছানি। আশা থাকে যেন নতুন বছর হয় সুন্দর শান্তির এবং স্বাচ্ছন্দের। এ প্রত্যাশা সবার মনেই থাকে। নতুন যেন জীবনের ক্লান্তি বিমোচনের অগ্রপথিকের মতো এগিয়ে নিয়ে যায় আলোর উদ্যানে। আমরা আজ পুরানকে বিদায় জানাই। অনেক ঘটনা প্রবাহ, বেদনা, সুখ-দুঃখ লুকায়িত পুরানকে বিদায় সম্ভাষন।
আজ নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বিশ্বজুড়ে প্রস্তুত সবাই। বিগত বছরের বিদায়ের কথা ভাবতে কোথায় যেন ব্যাথার সুর বেজে ওঠে। ভেসে ওঠে হৃদয় পটে নানা স্মৃতি নানা রূপ। দুই হাজার বিশ সালে আমরা কিভাবে কাটিয়েছি সেসব ইতিকথা। বিগত এই সালটিতে আমরা কেমন ছিলাম? বিশ্বের অংশীদার হওয়ার সুবাদে বিশ্ব সমাজের ঝড় ঝঞ্ঝার বাতাশ আমাদেরও স্পর্শ করেছে। বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের মনে ছিলো নানা অস্থিরতা, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস ও বিপ্লবই ছিলো প্রধান বিষয়। একনায়ক জালেম শাহীদের প্রতি ক্ষোভে মানুষ বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ করেছে। রাজনৈতিক উত্থান পতনে টালমাটাল হয়ে উঠেছে জনজীবন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ে মানবতা ধুকে ধুকে কষ্ট পেয়েছে। মৃত্যুবরন করেছে জালেমদের বুলেট আর তোমার আঘাতে । আজ আমরা নতুন বছরে প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আজ আমরা জাতীগতভাবে দিশেহারা হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছি। আমাদের আজ কি করণীয়? সমাজের জন্য মানুষের জন্য সুন্দর ভাবে নিরাপদে বাঁচার জন্য আমাদের কাজ আমাদের দায়িত্ব আছে একথা উপলব্ধি একান্ত আবশ্যক। আজকে দেশকে বাঁচাতে হলে প্রথম প্রয়োজন মানুষে মানুষে ঐক্য, ভালোবাসা। দুই হাজার একুশ যেন সে ঐক্যের নতুন সিড়িতে আরোহনের সুযোগ আমাদের এনে দেয়। আমার মনে হয় আমরা এক মন এক প্রাণ যোদ্ধা হয়ে যদি এ দেশ ও জাতিকে রক্ষায় সচেষ্ট না হই তবে অপশক্তি আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেবে। আমরা যেন কোন বিনাষী চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার না হই। আমরা যেন,কোন প্রলোভনে দুর্বল হয়ে না পড়ি। আমাদের মর্যাদাকে বিসর্জন না দেই। আমাদের অস্তিত্বকে সমাহিত না করি।
আমরা মনে করি একমাত্র বিশ্বস্ততা, মনুষত্ব ও আত্মশক্তির জাগরণই মানুষকে সব বৈরী পরিবেশকে জয় করতে শেখায়। ইতিহাস আমাদের সেই শিক্ষায়ই দেয়। একদিন হয়তো সময় ফিরবে নতুন দিনে নতুন বছরে। এ দেশ ও জাতি অনেক হতাশার মাঝেও সেই উদার অগ্রগামীর স্বপ্ন দেখছে। সে স্বপ্নের মাঝে বাস্তবতার পরশ হৃদয়ের কামনা আমাদের সকলের। অশ্রু, বিচ্ছেদ, বিদ্বেষ নয়। আমাদের অন্তরের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে সে স্বপ্ন পূরণে আশাবাদী হতে চাই।
তাইতো বলি নতুন বছর, আমাদের সে স্বপ্ন পূরণ এবং আমাদের মনটাকে নির্মল করে দাও। আমার কাছে মনে হয় আমাদের কি নেই? আমাদের আছে উর্বর মাটি। যে মাটিতে সোনা ফলে। যে মাটির নীচে আছে অনেক সম্পদ। মাটির বুকে প্রবাহিত হাজারো নদনদী এবং অসংখ্য খাল বিল হাওর, বাওড় জলাশয়। মাথার উপর সুবিশাল আলোকজ্জল আকাশ আমাদের সম্পদ। আমাদের সন্তানেরা আমাদের মানব সম্পদ। এরা আজ আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল করে সমৃদ্ধ করেছে।
আজ আমাদের মনটা যদি পরিচ্ছন্ন থাকতো হীনমন্যতায় আক্রান্ত না হতো , তবে আমরা মেরুদন্ড সোজা রাখতে সক্ষম হতাম। নির্ভরশীলতাকে জয় করে যদি আত্মনির্ভরশীলতাকে গ্রহণ করতে পারতাম আত্ম বিশ্বাসে একবার যদি উদ্বুদ্ধ হতে পারতাম, তবে এরই মধ্যে অগ্রগতির পথে আমরা অতিক্রম করতে পারতাম হাজার যোজন পথ। অথচ আমরা ধুকে ধুকে মরছি। নিজেরা নিজেদের সত্রুজ্ঞান করে শক্তিক্ষয় করছি আত্মঘাতি যুদ্ধে। হিংসা প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে নিজেদের শৃজনশীলতার বিনাশ ঘটাচ্ছি ষড়যন্ত্রের গ্রন্থি রচনায়।
অকথা কুকথার থুবড়ি ফুটিয়ে নিজেদের উপহাসের পাত্র রূপে জনসম্মুখে উপস্থিত করছি। নিজেদের সর্বজ্ঞ ভেবে সকল বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতো বাণী বর্ষন করার প্রবনতায় সমাজ জীবনকে কলুষিত করে, দিনে দিনে অর্বাচীনতার ঝড়ো হাওযায় জনপদকে অযোগ্য করে তুলছি।
নতুন বছরে তাই কামনা, সবাই অন্যের সমালোচনায় রত না হয়ে আত্মসমালোচনার সার্চ লাইটটা নিজেদের দিকে ফোকাস করি। দেশের সব সামাজিক শক্তিগুলোকে বিভক্ত খন্ড ছিন্ন না করে ঐক্যবদ্ধ ও সুসমন্বিত করার প্রয়াস যেন গ্রহণ করি।
এদেশের মানুষ অশ্লীল ও অরুচিকর বক্তব্যকে সব সময় ঘৃণা করে। এ সত্য অনুধাবন করে সবাই রুচিশীল সংযত ও গ্রহণযোগ্য কথাবার্তায় সামাজিক আবহকে পরিপূর্ণ করি যেনো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেভাবে গড়ে উঠতে পারে। তাই দুই হাজার একুশে এ কামনা করি। মহাকালের এই ক্ষণে এই জনপদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জ্ঞানের আলো। অজ্ঞতার অন্ধকার নয়। বাচালতা নয়। প্রয়োজন কল্যাণকামী মনে প্রভা পরিচ্ছন্ন মানসিকতা। প্রয়োজন সমাজব্যাপী সহজ সরল ও সুন্দর জীবনের পরশমনি। বিভাজন সৃষ্টিকারী বিদ্যুতের চমক নয়। জাতীর স্বপ্ন পূরণের আত্মনির্ভরশীলতার দিক নির্দেশনার আলো। দুই হাজার একুশ তোমায় স্বাগত।