স্টাফ রিপোর্টার :
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামে জমা-জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ওই গ্রামের সাইদুর রহমানের মেয়ে সিলভি শবনম তাকে শারিরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে আপন চাচা শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে (ভাইঝি) আদালতে মামলা দায়েরের ঘটনায় এলাকা জুড়ে জোর সমালোচনা চলছে। পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধে মামলার প্রতিপক্ষ বয়োবৃদ্ধ চাচার বিরুদ্ধে ভাতিজীর এই মামলায় এলাকার সামাজিক,রাজনৈতিক মহল ও গ্রামবাসির মাঝে ক্ষোভ ও অনিহার সৃষ্টি করেছে। এনিয়ে মামলার বিবাদিপক্ষ এরই মধ্যে আদালতের নির্দেশে পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তার এই তদন্তকে পক্ষপাতমুলক,একপেষে (আপত্তিকর) ও অগ্রহনযোগ্য বলে দাবি করে নিরপেক্ষ ও সৎ কোন পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা জুডিশিয়াল তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তা নাহলে তারা নিরপেক্ষ ও সুবিচার থেকে বঞ্চিত হবেন বলেও হতাশা প্রকাশ করেন। (মামলা নং ৮/২২ তারিখ:২২/০১/২২)
এ অভিযোগটির তদন্তে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন শ্রেনীর লোকজনের সাথে কথা বলে জানাযায়, গত ২২ জানুযারি ২০২২ইং বিকেলে উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের শফিকুর রহমান(৬৩) ও মিলন হোসেন (৪২) ( উভয় পিতা মৃত রমজান হোসেন)দের সাথে পরিবারের অপর ভাই ফসিয়ার (পিতা মৃত রমজান হোসেন)ও সাইদুর রহমানের মেয়ে সিলভি শবনমের সাথে জমির অংশ পাওনা ও পজিশন দখল নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। একপযার্য়ে উভয় পক্ষ বাকবিতন্ডার সময় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও হাতাহাতির রুপ নিলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রতিবেশিসহ আশপাশের জড়ো হওয়া লোকজন তা থামিয়ে দেন। এরই মধ্যে সিলভি সবনম ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন। খবর পেয়ে মহেশপুর থানা পুলিশের এএসআই রওশন আলী ঘটনাস্থলে যান এবং বৃত্তান্ত শোনেন। প্রতক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন বলতে থাকেন আপনারা নিজেরা-নিজেরা বিষয়টি মিামাংসা করে নেয়া উচিৎ। নইলে মানুষ আপনাদের সমালোচনা করছে। এসময় নাকি সাইদুর রহমানের মেয়ে সিলভি সবনম ক্ষুব্ধকন্ঠে দেখে নেয়ার হুমকি ও কেচ করবে বলে শাষাতে থাকেন। এরপর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি মহেশপুর হাসপাতালের ডাক্তারের (ডাঃ মোঃ সালাহউদ্দিন) রিপোর্ট নিয়ে ঝিনাইদহ বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে অসৎ উদ্দেশ্যে তার ওপর হামলা ও চুলের মুঠি ধরে টেনে মাটিতে ফেলে বুকে লাথি মারার ও গলায় পা দিয়ে হত্যার চেস্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি গ্রহন করে পিবিআইয়ের ওপর তদন্তের নির্দেশ দেন। সুত্র জানায়,দায়িত্ব পেয়ে পিবিআইয়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল সিলভি শবনমদের নিকট গিয়ে ঘটনাটি তদন্তপুর্বক প্রতিবেদন দিয়েছেন। কিন্তু পিবিআই কর্মকর্তা যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তা দেখে বিবাদি পক্ষ ক্ষোভ ও তহাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, ঘটনার সময় প্রকাশ্য দিনের বেলায় দেড়শতাধিক লোকজনের সামনের বিষয়টি পিবিআইয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যেভাবে একপেষে ও পক্ষপাতমুলক তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছেন তা দুঃখজনক ও আপত্তিকর। বিবাদি মিলন হোসেন বলেন, এলাকাবাসির কাছে পিবিআই পুলিশের এ একপেষে পক্ষপাতমুলক তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানা জানি হলে সবাই রহস্যজনক, হাস্যকর ও পক্ষপাতমুলক বলে সমালোচিত হচ্ছে। কারন পিবিআই কর্মকর্তা প্রতিবেদনে ২জন নিরপেক্ষ স্বাক্ষীর জবানবন্দি বলে যাদের জবানবন্দি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন ( ১। মোঃ সামছুল মন্ডল (৬২) পিতা মৃত রহমত আলী ও ২। মোঃ মমিনুর রহমান(৪৬)পিতামৃত চাঁদআলী মন্ডল) এ মামলার প্রতিপক্ষের লোক। তারা দু’জনই এ বিরোধপুর্ণ জমিজমা সংক্রান্ত মামলায় শফিকুর রহমানদের প্রতিপক্ষ এবং ফসিয়ার রহমান,সাইদুর রহমান সাধীন ও তার মেয়ে সিলভিদের পক্ষের লোক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এ মামলা ও ঘটনা প্রসঙ্গে শফিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি (মোবাইল ফোনে) বলেন,পৈত্রিক ওয়ারেশী জমি বন্টনের সময় গেড়েঁ গর্ত ধরনের যে অংশ ভাইবোনেরা কেউ সে সময় নিতে চায়নি, আমি তা নিয়ে অনেক টাকার মাটি ভরাট করেছি, তাতে রাস্তার পাশে হওয়ায় পজিশন বেড়ে গিয়েছে। এখন ওরা এ জমি দখল করে নিতে চাচ্ছে। এনিয়ে ছোট ভাই ফসিয়ার ও সাইদুর ও তার মেয়ে সিলভিসহ পরিবার হ্যাড়া পাকানোর চেস্টা করছে। আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি, কোর্টে মামলাও হয়েছে। এর আগে থানার ওসি সাহেব তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে সেভাবে সমাধানের চেস্টা করেছেন কিন্তু ওরা তা মেনে নেয়নি। এলাকার চেয়ারম্যান সাহেবও শান্তিপূর্নভাবে সমাধানের চেস্টা করেছেন। কিন্তু তিনিও ফেল। সেদিন (২২ জানুয়ারি) এ নিয়ে ফসিয়ার ও ভাইঝি সিলভি আমাকে মেরেছে,লোকজন তা ঠেকিয়েছে। অথচ সে-ই উল্টো আমার নামে কেচ করেছে। আমি চাই বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, সত্য সবার সামনে আসুক। মামলার বাদি সিলভি শবনম মোবাইলে আদালতে মামলা প্রসঙ্গে বলেন,আমার বাবা বিদেশ থাকাতে বড় চাচা ( শফিকুর রহমান) অন্য চাচারা ও ফুফুরা সবাই ভালো ভালো সব জমি ওদেও দখলে নিয়েছে। এছাড়া আমার বাবা বিদেশ থাকতে বড় চাচার কাছে ৩শতক করে দু’বার ৬ শতক জমি কিনেছে। তার ৩শতক জমি বুঝ করে দেয়নি। আমরা দাবি করায় আমাদের বিরুদ্ধে কেচ করেছে। সেদিন ওরা ভাড়া করে লোকজন নিয়ে এসে হামলা করে,সেখানে আশপাশের লোকজন আমাদের সাহায্য না করে ওদের পক্ষে ছিল। ওরা আমাকে মেরেছে। আমি ৯৯৯ এ ফোন করি। পুলিশ এসে সবই জানতে পারে। এ প্রসঙ্গে সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত মহেশপুর থানার এএসআই রওশন আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ৯৯৯ নম্বরের ফোন পেয়ে থানা থেকে ঘটনাস্থলে গেলাম। এসময় এক-দেড়’শ লোকের জটলা দেখতে পাই। উপস্থিত লোকজন ও পক্ষ-প্রতিপক্ষের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম সব ঘটনা। এসময় লোকজন মন্তব্য করে বলেছে এদের জমি নিয়ে অনেকদিন থেকে গোলমাল চলছে। এসময় মেয়েটিকে শফিকুর রহমান (আপন চাচা) মেরেছে একথা কেউ অভিযোগ করেনি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত যাদবপুর কলেজের প্রভাষক মোঃ মোমিনুর রহমান বলেন, ওই দিন ঝগড়া শুনে আমি ও বেশ কিছু লোকজন উপস্থিত হয়েছিল। মুরব্বী সিলভিকে মেরেছে বা অপদস্ত করেছে কথাটি ঠিক না বরং মেয়েটিই উত্তেজিত হয়ে মুরব্বিকে মারতে যায়। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সালাহউদ্দিন বলেন,শফিকুর রহমান ও তার ভাইদের সাথে জমিজমা নিয়ে ৪০ বছর ধওে রিবোধ চলছে। আমি সমাধানের জন্যে বার বার দ’পক্ষকে ডেকে শান্তিপূর্ণ মিমাংসার চেস্টা করেছি। কিন্তু ভাইরা (ফসিয়ার ও সাইদুররা) মেনে নেয়নি। আসল সমস্যা ওখানে রাস্তার পাশে শফিকুর রহমানের অংশ গেড়েঁগর্ত বুজিয়েছে, জমি দাম বেড়ে গিয়েছে। মোটকথা স্বার্থের দ্বন্দ্ব। তবে আমি জানি শফিকুর রহমান মুরব্বী একজন ভালো লোক, নিরিহ লোক। সেদিন গোলমালের ঘটনা সম্পর্কে আমি সবই শুনেছি। লোকজন বলেছে সেই মার খেয়েছে। তবুও আমি আশাবাদি ওরা নিজেদেও ভুল বুঝে শান্তিেেত ফিরে আসবে।