তেল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। বস্তুত তেল ছাড়া চলে না একদিনও। রান্নায় তেলের উপস্থিতি অনিবার্য। অথচ বর্তমানে তেল নিয়ে যে তুঘলকি কান্ড চলছে তা কোনো অবস্থাতেই প্রত্যাশিত নয়। ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকে বলা হয়েছে- খোলাবাজারে ভোজ্যতেল সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে দফায় দফায়। বোতলজাত তেলের তুলনায় খোলা তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খুচরা বিক্রেতা ফেঁদেছেন নতুন কায়দা। বোতল কেটে বিক্রি করছেন সেই তেল। কোনো কোনো ব্যবসায়ী খোলা সয়াবিন তেলের সঙ্গে বোতলের তেল মিশিয়ে বিক্রি করছেন বলেও রয়েছে অভিযোগ। এদিকে তেলের ঊর্ধ্বমুখী দামে অতিষ্ঠ নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। তেলের দামে লাগাম টানতে সরকারি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা। খুচরা ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়। প্রতি কেজি পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। ৫ লিটার মাপের বোতলের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৫৬০-৬০০ টাকায়। আর ১ লিটার বোতলের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। বোতলের তুলনায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেশি হারে বৃদ্ধির তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে লুজ সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, মাসের ব্যবধানে লুজ সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম মাসের ব্যবধানে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। লুজ পাম অয়েলের দাম মাসের ব্যবধানে ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে তেলের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভোক্তারা। তারা জানান, বাজারে কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণ নেই। যার যা খুশি তাই করছে। ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। নজরদারি বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি। একদিকে করোনায় মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। আগের মতো নেই কিছুই। এর মধ্যে একেকবার একেক পণ্যের দাম বাড়ছে। পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে আমাদের বাজারেও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। তাছাড়া আমাদের তেলের বাজার ৫-৭টি প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি। তারা দাম বাড়ালে আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য হই। পাইকারিতে এখন সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমেছে। আমরা ১০২ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এই দামে তেল কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করলে তা কিছুতেই স্বাভাবিক না। তেলের বাজারে নিয়ন্ত্রণ ফেরাতে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত তৎপরতা বাড়ানো উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে নামানো যায়। ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনা করে দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।