
আবু নাসিফ ॥
এখন জ্যৈষ্ঠ মাস। এ মাস ফলের মাস বা মধু মাস বলেও পরিচিত। জৈষ্ঠ্য মাস জুড়ে আম কাঠালের মিলন মেলা শুরু হয়। এছাড়াও এ মাসে জাম লিচুসহ অন্যান্য আরো হরেক রকমের ফল পাকে। এরই মধ্যে বাজারে বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড আমসহ নানা জাতের আম আসতে শুরু করেছে। মৌসুমের শুরুতে আমের কদর ও আকর্ষন বেশি থাকায় অনেক অসাধু আম ব্যবসায়ী ও আম চাষিরা আগাম আম ভাঙ্গতে শুরু করেছে। আর আম যেন তাড়াতাড়ি পাকে ও সুন্দর কালার আসে সে জন্যে আম পা[ড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন নামের রাসায়নিক মিশিয়ে দেয়া হয়। আর এ কাজ টি করা হয় খুবই সতর্কতার সাথে ও সুকৌশলে। যাতে প্রশাসন ও ভোক্তা সাধারন না জানে বা না দেখে। সেভাবেই তা কাচাঁ আম পাড়ার সাথে সাথে বাগান থেকে স্প্রে এবং নানা পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু কেউই ভাবছেনা বাজার থেকে যে আম কিনে আনছে তা কতটা রাসায়নিকের বিষক্রিয়ামুক্ত। বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে যে আম বিক্রি হচ্ছে এমনকি কাঁঠালেও রাসায়নিক প্রয়োগ করা হচ্ছে। রাসায়নিক দিলে আম কাঁঠাল সহজে এবং অতি সত্তর পেকে যায়। তাই ব্যবসায় অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিতে পরিক্ক হওয়ার পূর্বেই অসাধু ব্যবসায়ীরা আম পেড়ে সাথে সাথে তাতে মিশিয়ে দিচ্ছে কার্বাইড বা অন্য নামের রাসায়নিক । এ নিয়ে প্রশাসনের অনেক অভিযান এবং অনেক জেল জরিমানা করা হলেও তা বন্ধ করা যায়নি। অসাধু ব্যবসায়ীরা গোপনে তাতে রাসায়নিক প্রয়োগ করছে। রাসায়নকিরে এ ভয়াবহতা নিয়ে পত্র পত্রিকা বা মিডিয়ায় অনেক লেখালেখি হচ্ছে। যার ফলে প্রশাসন নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধের জন্য। যার ফলে আম ব্যবসায়ীরা নতুন করে বলতে শুরু করেছে আমে কার্বাইড দেয়া হয়না। দেয়া হয় বিষক্রিয়ামুক্ত একটি স্প্রে। যা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি রাসায়নিকই ক্ষতিকর। সে যে নামরেই হোক। তা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বাংলাদেশে আমের তিন বিখ্যাত পাইকারি বাজার রাজশাহী,সাৎক্ষিরা ও ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর এ অঞ্চলের একটি বৃহৎ আমের বাজার। এ বাজারের ব্যবসায়ীরা এখন বলছে আমে কিছু মেশানো হয় না। এখানে একজন প্রখ্যাত আমচাষী বলেছেন, আমে কার্বাইড মিশানো হচ্ছে না। অন্য যে নামের একটি স্প্রে মেশানোর কথা স্বীকার করে তিনি বলেছেন, এতে ক্ষতি নেই। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি রাসায়নিকই ক্ষতিকর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝিনাইদহ যশোর চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর সহ সব আম বাজারেই আম এখন রাসায়নিকের কবলে। আম পাড়ার সাথে সাথে আমব্যবসায়ীরা আমে রাসায়নিক স্প্রে করছে। কার্বাইড দিয়ে বা অন্য যে কোন নামের রাসায়নিক মিশিয়ে দিচ্ছে। রাসায়নিক দিয়ে আম পাকিয়ে বাজার বিক্রির অভিযোগে প্রশাসন গত বছর অভিযান চালিয়ে তা বন্ধের চেষ্টাও করছে। কিন্তু কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না মানবতা বিরোধী অপতৎপরতা। যার ফলে রাসায়নিকে পাকানো আম খেয়ে মানুষ বিভিন্ন রোগ ব্যাধীতে আক্রান্ত হচ্ছে। বাড়ছে লিভার, কিডনি ও ক্যান্সারের মত জটিল রোগ বিস্তার। বন্ধাত্ব, পুরুষত্বহীনতা অটিমন ঘরে ঘরে। দৃষ্টিহীন, মেধাশুন্য ও স্মৃতিভ্রষ্ট হচ্ছে শিশুরা। কার্বাইড বা রাসায়নিক দিয়ে আম পাকালে তা মানবদেহের যে মারাত্মক ক্ষতি করছে তা জেনেও ব্যবসায়ীরা উদাসীন। তাদের এ নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই। দরকার অধিক মুনাফা অর্জন। প্রশাসনের কোন নির্দেশ মানছেনা। গোপনে হলেও কার্বাইড বা রাসায়নিক মিশিয়ে দিচ্ছে। রাসায়নিকের ক্ষতিকর অবস্থা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. খুরশীদ জাহান বলেন, প্রতিটি মানুষ মৌসুমী ফল খেতে চায়। কিন্তু অসৎ ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে ফলে কেমিক্যাল মিশ্রণ দেয়। সেই ফল খেলে কিডনী লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়া পরিপক্ক আম আর কেমিক্যাল মিশ্রিত আমের স্বাদ ও গন্ধ এক নয়। এ বিষয়ে সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মোঃ সায়েদুল হক বলেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড পানি বা জলীয় বাষ্পের সাথে মিশে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও অ্যাসিটাইলিন গ্যাস ইথিলিনের মত কাজ করে। ফলে সহজেই আমসহ যেকোন কাচাফল পেকে যায়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড দামে খুব সস্তা হওয়ায় দেশের ফল ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে সহজলভ্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে ফল পাকিয়ে থাকে। ফল পরিণত হওয়ার আগেই ফল পাকানোর কাজটি সহজেই সম্পন্ন হয়ে যায় কৃত্রিম ভাবে। এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, সাধারণত পানিতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড মিশিয়ে সেই পানিতে ফল ভেজানো হয়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড পানির সাথে মিশে অ্যাসিটিনি নিঃসৃত করে ফল পাকিয়ে দিচ্ছে। একই সাথে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ফলের তক ভেদ করে ভেতরে শাঁসে ঢুকে যায়। ওই ক্যালসিয়াম কার্বাইডে মারাত্মক বিষ হিসাবে মিশ্রিত থাকে আর্সেনিক ও ফসফরাস। এই আর্সেনিক ও ফসফরাসও ফলের ভিতর ঢুকে যায়। ফল পাকার পরও ভেতরে কেমিক্যাল থেকে যায়। এসব ফল খেলে শরীরের ভিতর বিষক্রিয়া চলতে থাকে। তাৎক্ষণিকভাবে হয়তো কোন প্রতিক্রিয়া নাও দেখা দিতে পারে। তকে অনেক সময় এ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। বর্তমানে যেভাবে শিশ্রিত এসব ফল শাক, সবজি, মাছ গোশত খাওয়ানো হচ্ছে এতে প্রায় প্রতি পরিবারে কিডনি, লিভার ডিজিস ক্যান্সার, মেয়েদের বন্ধাত্ম, পুরুষত্বহীনতা, বিকলাঙ্গ সন্তান জন্মদান ইত্যাদি জটিল রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। শিশুদের দৃষ্টিহীন মেধাশূন্যতা, স্মৃতিভ্রষ্টতা ইত্যাদি দেখা দিচ্ছে।