
বিশ্ব মুসলিমের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। মাসব্যাপী সীয়াম সাধনার পর পবিত্র মাহে রমজানের ঈদ ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেয় খুশির বার্তা। আমাদের সামাজিক সম্প্রীতি হোক অকৃত্তিম। সবাইকে ঈদ মোবারক।
ঈদুল ফিতর আসে মাহে রমজান শেষে। পবিত্র এ মাসটিতে ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সংযম সাধনার ফলেই ঈদের প্রকৃত ও নির্মল আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব। তাই ঈদের প্রাক্কালে আমাদের প্রত্যেককে আত্মপর্যালোচনা করে দেখতে হবে- আমরা অপরিসীম মাহাত্ম্যের মহান মাসটিকে কতটুকু মর্যাদা দিয়েছি পবিত্রতা রক্ষার মাধ্যমে। এ মাসের শিক্ষা সারা বছর মেনে চলার দৃঢ় প্রত্যয়ে আমরা উজ্জীবিত কি না। এই ঈদের দিন থেকেই জীবনকে যেন আমরা বদলে দিই; এগিয়ে যাই রমজানের আলোকে। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগ করে নেয়ার মাঝেই ইসলামের এই সর্বপ্রধান উৎসবের সার্থকতা। এর সাথে ঈদের দিনে সৌভাতৃত্বের প্রকাশ ঘটে প্রীতি শুভাশিস ও আলিঙ্গন দ্বারা। ঈদের বাণী মানুষে মানুষে, ধনী-গরীবে সাম্য-সম্প্রীতির। তা পরিব্যপ্ত হোক সমাজের প্রীতি অঙ্গনে; বজায় থাকুক সারাটি বছর। ঈদের মর্মবাণী যে শান্তি ও শুভ কামনা, তাকে সামষ্টিক জীবনে স্থায়ী করতে হবে। ঈদের চেতনায় শপথ নিতে হবে শোষণ-বঞ্চনা-বৈষম্যমুক্ত মানবিক সমাজ বিনির্মাণের।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর একটি বিখ্যাত গানে বলেছেন, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে/এলো খুশির ঈদ/তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে/শোন আসমানী তাগিদ।’ অর্থাৎ এই ঈদ নিছক উদ্দেশ্যহীন আনন্দ-উল্লাস নয়, স্বার্থসঙ্কীর্ণতার উর্ধ্বে পরার্থপরতা ও সহমর্মিতার বাণী তুলে ধরাই ঈদের তাৎপর্য। নজরুল সে গানে আরো বলেছেন, ‘আজ ভুলে গিয়ে দোস্ত দুশমন হাত মিলাও হাতে/তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্বনিখিল/ইসলামে মুরীদ।’ নিখিল বিশ্বদূরের কথা, নিজের সমাজ ও দেশটাকে রমজান ও ঈদের সুমহান আদর্শে সংযম ও সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য আমরা কতটুকু ব্রতী হই, সে হিসাব করা জরুরি।
আজ আমাদের দেশ ও জাতি নানা সঙ্কটে আকীর্ণ। ঈদের শিক্ষায় সবাই উদ্বুদ্ধ হলে আমরা মৈত্রীর বন্ধনে জাতীয় সংহতি এবং শান্তিময় স্বদেশ গড়তে পারি। রাজনৈতক ক্ষেত্রে যখন দ্বেষ ও দ্বন্দ্ব-সহিংসতায় প্রবল, ক্ষমতাদম্ভে নির্যাতন ও দখলবাজিতে অপশক্তি অনুন্ঠ; আর অর্থনীতিতে পরোয়াহীন মুনাফা লুন্ঠনে যখন রমজানের অমর্যাদার সাথে গণমনুষের ঈদ উদযাপন হয় ব্যাহত, তখন রমজান ও ঈদের গূঢ় তাৎপর্য, তথা ইসলামের নির্দেশনা উপলব্ধির বিকল্প নেই।