
আবু নাবিল
ঈদ মোসলমানদের দরজায় কড়া নাড়ছে। তাই সবার মাঝেই এক আবেগময় আনন্দ। সবাই অধীর আগ্রহে আনন্দের সেই দিনটির অপেক্ষায়। একসাথে আপনজনদের সাথে ঈদ উদযাপনের আনন্দই আলাদা। গরীব বা মহৎ নেই, সবার মধ্যেই এ আনন্দ যেন আলাদা এক আমেজ সৃষ্টি করে। ঈদের আনন্দ আল্লাহ প্রদত্ত বলেই মনে হয় এর এক আলাদা অনুভূতি। সুদুর অতিত কাল থেকেই আমাদের দেশের ঐতিহ্য প্রচলিত আছে। যেমন ঈদের আগের রাতে অর্থ্যাৎ রমজানের শেষ দিনে ইফতারের সময়েই সবার মনে এক আগ্রহ দেখা দেয় ঈদের চাঁদ দেখার । চাঁদ দেখার সাথে সাথে সবাই যেন মনের এক উপচেপড়া আনন্দে গেয়ে ওঠে কবি নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ঈদের গান- ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুািশর ঈদ…..। আপনাকে আজ বিলিয়ে দে …। তার পরই ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের হৈ-হুল্লোড় করা, নতুন জামা কাপড় পরে ঈদের মাঠে যাওয়া,ঘুরে বেড়ানো, ছোট শিশুদের সালামী দেয়া-নেয়া। এই সবটাই আমাদের নিজস্ব আনন্দ ঐতিহ্য। ঈদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজ নিজ ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিয়ে পালিত হয়। শুধু তাই নয় ঈদ উৎসবকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন ইন্দোনেশিয়ায় হারি লিবারান, মালোয়েশিয়ায় হারি রয়া পুয়ামা, ব্রুনাইয়ে সাইদিল ফিতরি, তামিল অঞ্চলে ননবু পিরানাল, জাভায় এনগাইদুল ফিতরি,সুদানে বোদোরান সিয়াম, তুরষ্কে কুচুক ব্যারাম, সিন্দতে ঈদ মিনাহ, সিনেগালে কোরেটি, পশতুরো কোশানে হি সুপআকতার, ও ক্রোয়েশিয়ায় রামজানকে বাহরাম নামে ডাকা হয়। এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদ উদযাপনের রীতি নীতি জানা যাক। – মিশর : প্রাচীন সভ্যতার দেশ হিসেবে খ্যাত মিশরে ঈদ উপলক্ষে তিন দিন ব্যাপী উৎসব পালন করা হয়, যার মধ্যে একদিন সরকারি ছুটি থাকে। মিশরীয়রা ঈদগাহে যাওয়ার আগে বিশেষ এক ধরনের স্ন্যাকস খেয়ে থাকে। এই সময়টা মিশরীয়রা দেশের আনাচে কানাচে ঐতিহাসিক স্থান গুলোতে ঘুরে দেখতে ভালো বাসে। তবে তাদের ঈদে ভ্রমনের জন্য সাম আল শেখ’ জায়গা রয়েছে। সেখানে নারী,পুরুষ,শিশু সবাই ভিড় জমায়। ঈদে বিভিন্ন রকমের খাবার রান্না হলেও বাদাম দিয়ে তৈরী করা বিশেষ এক ধরনের খাবার কাহকা’ সব বাড়িতেই রান্না হয়। সৌদি আরব: সৌদি আরবে রমজানের প্রথম দিন থেকেই ঈদের উৎসব শুরু হয়। সৌদি আরবের মক্কায় মসজিদুল হারামে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এখানে এক সাথে প্রায় ২০ লাখ লোক মোসলমান ঈদে জামাতে অংশ গ্রহন করে। সৌদিরা ঈদের নামাজ শেষে ছেলে বুড়ো এক অপরের সাথে কোলাকুলি করে। তবে তাদের কোলাকুলির ধরন আলাদা। আমাদের দেশের মতো নয়। তারা পরস্পর চুমু খায় বিশেষ পদ্ধতিতে। বয়ষ্করা শিশু- কিশোরদের হাতে সালামি ক্যান্ডি, খেলনা, ইত্যাদি উপহার দেয়। ঈদের ষিদনে বিভিন্ন ধ নের চকরেট দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় মেহমাদের। যেমনটি আ,মাদের দেশে সেমাই ফিরনি উত্যাদি দিয়ে করা হয়। দোকানে ঈদের নাস্তা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের চকলেট বিক্রি হয়। তুরষ্ক : তুরষ্কে ঈদের উৎসবকে সেকার বৈরামি বা রামাদান বৈরামি বলা হয়। ঈদ উপলক্ষে তুরষ্কে তিন দিন সরকারি ছুটি থাকে। তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিনে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পুরুষেরা মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। তুরষ্কে একটি বিশেষ প্রথা রয়েছে যে সম্মানীয় ও বয়ষ্করা একজন আরেকজনের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় তাদের ডান হাতে চুমো খায়। ছোটরা তাদের পার্শ্ববর্তি বিভিন্ন বাড়িতে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যায়। শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় প্রত্যেক বাড়ি থেকে ঠোটদের জন্যে চকোরেট, ক্যান্ডি, মিষ্টি ও বাকালাভা নামের এক ধরনের খাবার প্রদান করা হয়। আফগানিস্তান : আফগানিস্তানে ঈদের আনন্দটা একটু বেশীই। ঈদ উপলক্ষে আফগানিস্তানেও তিন দিন সরকারি ছুটি থাকে। ঈদের ১০ দিন আগে থেকেই আফগানিস্তানের নাগরিকেরা বাড়িঘর ঘষে মেজে পরিষ্কার করে। ঈদের দিন বাড়ি বাড়ি জিলেপি, শোর নাখদ ও কোলচা কেক তৈরী করা হয়। বড়রা ছাটদের নানাবিধ উপহার দেয়। মধ্যপ্রাচ্য: ইরান ইরাক,মিশর, সিরিয়া ,জর্ডা,লেবানন , আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহারাইনসহ অন্য মধ্য প্রাচ্যের দেশ গুলোতে ঈদ প্রায় একই ধরনের রীতি-নীতি ও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়্ মধ্য প্রাচ্যের প্রায় সব দেশের মোসলমানেরা ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে খেজুর খেয়ে মিষ্টি মুখ করে নেয়। সকালে ঈদের নামাজ পড়ার পর সবাই নিকটাত্মীয় স্বজন, ও বন্ধু বান্ধবের বাসায় ঈদ শূভেচ্ছা বিনিময় করতে যায়। মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ঈদ উপলক্ষে ঘোড় দৌড় খেলার আয়োজন করা হয়। মালোয়েশিয়া: মালোয়েশিয়ায় ঈদের দিন ঈদের দিন অফিস আদালত বন্ধ ঘোষনা করা হয়। ঈদের দিন মালায়েশিয়ার অধিবাসিরা সঙ্কোক ও কালো পাগড়ী পরিধান করে। ঘরে ঘরে মজাদার খাবার রান্না করে। যার মধ্যে আছে সামবাল,ডোডল,অপোর, লেমাঙ,জরেং, কেটুপাট, ইত্যাদি। ঈদের আগের রাতে বিভিন্ন স্থানে কোরআনিক ভাবগাম্ভির্যর্পূন বিভিন্ন সঙ্গিত পরিবেশন করা হয়। এই সঙ্গিতকে কাসিদা বলা হয়। ইন্দোনেশিয়ার পুরুষেরা ঈদের দিনে বাজু কোকো নামে এক প্রকার ঐতিহ্যবাহি পোশাক পরিধান করে। এ ছাড়াও তারা পাশ্চাত্য আদলে স্যুট,ঢিলেঢালা টাউজার ও পিচিহ্যাট পরিধান করে। মহিলারা ঈদের দিনে যে ঐতিহ্যবাহি পোষাক পরিধান করে তার নাম কিবায়া কুরুং। এটা হিজাবের সাথে এক প্রকার স্কার্ট। বাশের মাথায় আলো জ্বালিয়ে ঈদের দিনে মালোয়েশিয়ানরা বাম্বো ক্যানন নামে একটি ঐতিহ্যবাহি অনুষ্ঠান পালন করে। ঈদের আনন্দ দেশে দেশে যে ভাবেই পালন করা হোক না কেন ? এই দিনটি সব মানুষের জন্য এক অনাবিল আনন্দ বয়ে আনে। তাই আমরা প্রতিক্ষা করি এই আনন্দময় দিনের। ভ্রাতৃত্ব বাড়ানোর মহা মিলন মেলার।