
বিশেষ প্রতিনিধি:
যশোর বিল বাওড় মৎস উন্নয়ন প্রকল্পাধীন কোটচাঁদপুরের বলুহর সেন্ট্রাল হ্যাচারী কমপ্লেক্্র ম্যানেজার আশরাফ উল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম,দুর্নীতি,অর্থ আত্মসাতের সুনির্দ্রিষ্ট অভিযোগ উঠেছে। বিগত প্রায় চার বছরে তিনি অনিয়ম ও দুনীর্তি করে সরকারি এ প্রকল্পের কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। বর্তমান ম্যানেজার সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছেন। তার এ কাজের প্রধান সহযোগি হিসেবে প্রকল্প পরিচালক ( পিডি) মোঃ আলফাজ উদ্দিন শেখ এর বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগিদের পক্ষ থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগে বলাহয়, এই সেন্ট্রাল মৎস হ্যাচারী কমপ্লেক্্র দেশের একটি বৃহত্তর মৎস প্রজনন কেন্দ্র। এখানে প্রজননকৃত রেনু দিয়ে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মাছ চাষ এবং মাছের চাহিদা পুরন হয়। এখান থেকে যশোর,মাগুরা,কামারখালী,ফরিদপুর,চুয়াডাঙ্গা,মেহের পুর,কুষ্টিয়া সাৎক্ষিরা ,কলারোয়াসহ এ অঞ্চলের মাছ চাষী ও সাধানরন মানুষ যারা পুকুরে মাছ চাষ করেন তারাও এখান থেকে রেনু ক্রয় করেন। আর এই বিপুল পরিমান চাহিদার কারনে হ্যাচারী মানেজারের পোয়াবারো।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, চলতি মৌসুমে নানা কারসাজি করে টার্গেট নির্ধারন করা হয় ৩৪ লাখ টাকার মত। কিন্তু এ বছরও রেনু বিক্রি হয়েছে এক কোটি টাকারও বেশি। বিগত বছর গুলোতেও নাকি একই ভাবে রেনু বিক্রি হয়েছে। অথচ এর আগের বছর গুলোতে টার্গেট ছিল ৫০ লাখ টাকা। এখানে সরকারি রেটে রেনু বিক্রির নিদের্শনা থাকলেও ম্যানেজার আশরাফ নিজের খেয়ালখুশি মত রেটে রেনু বিক্রি করে ক্রেতা সাধারনের পকেট কেটেছেন। ক্রেতার সাথে এক ধরনের প্রতারনা ও ডাকাতের আচরন করা হয়েছে । বিভিন্ন জাতের মাছের রেনুর সরকারি রেট কেজি প্রতি ১৯০০ টাকা অথচ ক্রেতাদেও কাছে প্রতি কেজি ৫০০০-৬০০০-৮০০০/টাকা পযর্ন্ত কেজি বিক্রি করা হয়েছে। মানি রিসিড দেয়া হয়েছে নকল। অর্থ্যাৎ নিজের তৈরী মানি রিসিডই বেশির ভাগ ক্রেতাকে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ । যে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানা ভাবে নাজেহাল,হুমকি ও রেনু না দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে সংশ্লিষ্টদের অনেকেই জানান। কিন্তু উপর মহলে অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হয়নি।
অভিযোগে আরো বলা হয়,পিডি অফিস থেকে রেনু বিক্রির জন্য মানি রিসিট সংগ্রহ করা হলেও ম্যানেজার আশরাফ অনিয়ম করে (আনঅফিসিয়ালি) নাকি নিজে প্রেস থেকে ছাপা রিসিট অধিকাংশ ক্রেতাকে দেয়া হয়েছে। বাড়তি রেটে বিক্রিকৃত টাকা সরকারি ফান্ডে জমা না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। মানি রিসিটের স্টোক রেজিষ্টার বা সিরিয়াল নং বা অফিস কর্তৃক সরবরাহকৃত রেজিষ্টার মিলিয়ে দেখলে আসল বা নকল বোঝা যাবে। ঢাকা থেকে কি পরিমান মানি রিসিট নিয়েছেন তার রের্কড যাচাই করলেও সত্যতা পাওয়া যাবে।
কোন ক্রেতা মোবাইল ফোনে রেনুর দাম বা রেট জানতে চাইলে দাম বলা হয়নি । সুচতুর ম্যানেজার রেনু বিক্রির সময় সরাসরি বিক্রি না করে বেশির ভাগই তার অনুগত কর্মচারিদের মাধ্যমে বেশি দামে বিক্রি করেন। ০১৭১১১২৭৮৫১১ নম্বরে ফোন দিলেও সত্যতা পাওয়া যাবে। মোবাইল নং ০১৮৩৪৭৮৫৭৩৩ , ০১৭২৪২৯৮৩০০ সুষ্ঠু তদন্ত করলে প্রমান পাওয়া যাবে বলে তারা দাবি করেন। বিক্রিকৃত এসব রেনুর মধ্যে রয়েছে সিলভার,কম্বল কার্প,রুই,ব্রিগেড,মৃগেল,গ্রাস,কাতল,বাটা ও পুটি ইত্যাদি।
নিয়মানুযায়ী রেনুর সরকারি রেট লিস্ট প্রকাশ্যে ক্রেতাদের সামনে রাখতে হবে কিন্তু নিয়মনীতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে রেনু বিক্রির সরকারি রেট পাবলিক ক্রেতাদের জানতে দেয়া হয়নি। এ বছর কুট কৌশলে সমস্যা দেখিয়ে সরকারি টার্গেট ৩৪ লাখ টাকা পুরন দেখিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। করোনা কালিন সময়ে একই ভাবে রেনু বিক্রি করা হলেও তিনি নানা অজুহাত পেশ করে নীরবে সরকারি অর্থ লোপাট করে আঙ্গুল ফুলে বট গাছে পরিনত হয়েছেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, রেনু পোনা ডেলিভারি দেওয়ার বয়স না হওয়ার ১২ ঘন্টা আগেই সাপ্লাই দেওয়ার কারনে এবছর চাষির পুকুরে রেনূ মারা গেছে। * ব্রুড মাছ তৈরী করে বেসরকারি হ্যাচারি মালিকদের কাছে বিক্রি করার কথা থাকলেও বাজরে বিক্রি করা হয়েছে। হ্যাচারি মালিক আবেদন করলেও তাদের দেওয়া হয়নি। মোবাইল নং রুপালী হ্যাচারি ০১৭১১৩৯৮৫২৫ মা ফাতেমা ০১৭১১৩৯০৫১৩ মধুমতি হ্যাচারি ০১৭১১৫৭১৩৭৩ এই নং যোগাযোগ করলে প্রমান পাওয়া যাবে।
আবার হালদা থেকে রেনু পোনা নিয়ে ব্রড মাছ তৈরীর পরিকল্পনা থাকলেও বিগত ৫ বছরে কোন নদীর মাছ আনা হয়নি। এতে করে উন্নত জাতের ব্রুড বা রেনু পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন মাছ চাষী ও হ্যাচারী মালিকরা।
* চায়নিজ কার্প মাছের সংখ্যা ৪০০০ টি মজুদ দেখানো হলেও ১৫০০ বেশি হবেনা। ম্যানেজার এখানে কর্মরত কর্মচারি-কর্মকর্তা তার মতের বাইরে কেউ আপত্তি বা কিছু বললে তাকে সরিয়ে দেন। মিথ্যা অপবাদ দিয়েও বদলি করার রের্কড রয়েছে। যাদেরকে বদলি করা হয়েছে গার্ড ০১৭২৪০৮১৭৯৩ হ্যাচারি অফিসার বিউটি খাতুন ০১৭২৩৪৬৯৯২৮. স্টোর অফিসার, ০১৭১২২৪৪১৭৮ বদলি করা ছাড়াও অফিস সহকারি ০১৭১৯০৩৩৭৯৩ কে জোর পুর্বক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। * ১৫/০১/২৩ তাং এ ১৪ নং পুকুর থেকে প্রায় ২ টন ব্রুড মাছ বারোবাজার নামক বাজারে বিক্রয় করা হয়েছে। এই টাকা সরিকারি ফান্ডে জমা দেওয়া হয়নি। * ৫ ও ৬ নং পুকুর খননের সময় পুকুর থেকে প্রায় ৬-৭ টন ব্রুড মাছ বিক্রয় করা হয়েছে। ফলে ২৫ টন ব্রুড মাছের মধ্যে মাত্র ১০ টন ব্রুড মাছ মজুদ আছে কিনা সন্দেহ। অর্থাৎ ব্রুড মাছ শুন্য হ্যাচারী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। * পাবদা /গুলসা /টেংরা মাছের ৪৫ কেজি রেনু উৎপাদন দেখালেও বাস্তবে কোন ব্রুড মাছ নেই। সুবর্ণ রুই মাছের ব্রুড ( মা মাছ) ১২৮০ কেজি ষ্টকে দেখালেও বাস্তবে ১৫০কেজির বেশি মাছ নেই। এসব অভিযোগের সত্যতা (বাস্তব) শুধুমাত্র সকল ষ্টাফ ও ৩০ কর্মচারির কাছ থেকে তথ্য নিলে সত্যতা পাওয়া যাবে বলে অভিযোগ পত্রে বলা হয়।
অভিযোগে আরো বলা হয়, ২০১৯ সালে ব্রুডফিস বা মা মাছ ছিল ১৫ টন, রেনুর উৎপাদন ছিল ১৫৫০ কেজি। ২০২০ সালে ব্রুডফিস (মা মাছ) ছিল ১৫.০০ টন, রেনুর উৎপাদন ছিল ১৫৯০ কেজি। ২০২১-২২ সালে ব্রুড মাছ ছিল ১৫.২ টন এবং রেনুর উৎপাদন ছিল ১৬৩২ কেজি।
২০২২-২৩ সালে আগের ব্রুডফিস (মা মাছ) ছিল ১৬ টন এবং চাইনিচ কার্প ৮ টন সহ সর্বমোট ব্রুড মাছ প্রায় ২৪ টন। রেনুর উৎপাদন হওয়ার কথা ২২০০ কেজি। অথচ ব্রুড মাছ দেখানো হচ্ছে ১৬ টন, রেনুর উৎপাদন দেখানো হচ্ছে ১৬৫০ কেজি। যা সর্ম্পুন অনিয়ম । এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কমর্চারি বলেন ৬ ও ৭ পুকুর খনন করার সময়ে ৮-৯ টন ব্রুড মাছ এবং ২৬ নং পুকুরের সমস্ত মাছ বাজারে হরিনাকুন্ড মিলনের আড়তে বিক্রয় করা হয়েছে। বিগত ২০২২ সালের জুলাই- আগষ্টের মধ্যে এ বিক্রির কাজ চলে। হ্যচারির ২৫ কর্মচারির মোবাইলে কথা বললেও তারা অস্বীকার করতে পারবে না বলে অভিযোগকারীরা দাবি করেন। উল্লেখ্য যে, ০১/১২/২০২২ যশোরে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিদ্যালয়ে ৪০০ কেজি এবং ২৮/১২/২০২২ হরিনাকুন্ডে এক ড্রামে ৪৩২ কেজি মিলনের আড়তে বিক্রয় করা হয়েছে। এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। যা তদন্ত করলে সত্যতা প্রমানিত হবে।
*এছাড়া সাবমারসেবল মেরামত খাতে ২০২০ সালে ৬০,০০০/ ২০২১-২২ সালে ১,৮০,০০০/ গাড়ি মেরামত খাতে বরাদ্দ আসলেও কোন কাজ করা হয়নি। বরং আগের ম্যানেজারের কাজ দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। সাবমারসেবল পাম্প এবং গাড়ির ৪ টি চাকা, ডেনটিং ও পেনটিং আগে যা করা হয়েছে তা-ই রয়েছে। অথচ এসব কাজ দেখিয়ে বার বার টাকা তোলা হচ্ছে।
অহরহ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা সত্যতা যাচাই করতে আসলেও ম্যানেজার সাহেবের নগদ নারায়ন পকেটে ঢুকিয়ে সন্তোষ্ট চিত্তে বিদায় নিয়েছেন। যার ফলে সাংবাদ কর্মীদের অনেকেই ম্যানেজারের পকেটে । আর এসব সংবাদ কর্মীরা ইনিয়ে বিনিয়ে ম্যানেজার আশরাফের পক্ষে প্রশংসার খই ফুটিয়েছেন স্ব স্ব মিডিয়ায়। আর এসব সংবাদ পুঁজি করে তিনি সংশ্লিষ্ট উপর মহলে তদবীর চালিয়ে শ্রেষ্টত্বের ক্রেস্ট পর্যন্ত বাগিয়ে নিয়েছেন। বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতা, রাজনীতির ক্যাডার,সরকারি কর্মকর্তা,প্রশাসন,সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সবাইকে নানা কৌশলে ম্যানেজ করে নিতে ম্যানেজার আশরাফ উল ইসলাম অনেক পারদর্শী বলে সমালোচনার অন্ত নেই। ম্যানেজার জনাব আশরাফ’র এখানে অবস্থান প্রায় ৪ বছর হতে যাচ্ছে, যে কারনে তিনি টেনশনে আছেন। যে কোন সময় বদলী করা হলে রাজার ভান্ডার হাত ছাড়া হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় বদলী ঠেকাতে নাকি গোপনে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দরবারে ধরনা দিচ্ছেন।
উরোক্ত অভিযোগের ব্যাপারে হ্যাচারী ম্যানেজার আশরাফ উল ইসলামের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট । আমি সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে চালাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প পরিচালক মোঃ আলফাজ উদ্দিন শেখ’র কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেনুর সরকারি রেট ১৯০০ টাকা,কিন্তু প্রথম দিকে কেজি ৪ হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রি করা হয়েছে, কারন প্রথম দিকে কস্ট বেশি পড়ে তাই বেশি টাকায় বিক্রি করা হয়। মৌসুমের শেষ দিকে ৫০০ টাকায়ও বিক্রি করতে হয় তাই গড়ে বিক্রির হিসেবটা করতে হয়। এতে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেন সে সময় ভোক্তা বেশি দামে নিলেও লাভবান হয়। আবার খোলা বাজারে গোপনে ব্রুড মাছ বিক্রির অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, বাজারে বিক্রির নিয়ম আছে। অথচ নিয়মানুযায়ী খোলা বাজারে ব্রুড বিক্রির কোন নিয়ম নেই। ব্রুড কেবলমাত্র পাবলিক হ্যাচারীর মালিকদের কাছেই বিক্রির নিয়ম রয়েছে । তাই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগি অভিযোগকারিরা।