
স্টাফ রিপোর্টার :
সাকিমা খাতুন আর সাবিদ সম্পর্কে ভাইবোন। সাবিদের বয়স ৫ বছর, সাকিমার ৯। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সংসার ও সন্তানের মায়া ছিন্ন করে তাদের মা অন্য এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক করে ঘর ছাড়েন। তারপরও বাবা আব্দুল মজিদ দুই সন্তানকে বুকে আগলে রেখেছিলেন। একমাস যেতে না যেতেই গত ২০ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাবা আব্দুল মজিদ। এরপর এতিম হয়ে যায় সাবিদ ও সাকিমা।
অভিভাবকহীন সাকিমা ও সাবিদদের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বড় ঘিঘাটি এলাকায়। সাকিমা স্থানীয় বড় ঘিঘাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। তার ভাই সাবিদ হোসাইন চলতি বছর একই স্কুলের প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে এই দুই এতিম শিশু তাদের বড় চাচা আব্দুল আজিজের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
শিশু দুটির বিষয়ে জানতে পেরে তাদের বাড়িতে ছুটে যান কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া জেরিন। ঈদের আনন্দ ভাগ করতে তাদের জন্য নতুন কাপড় ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হন। নতুন জামা কাপড় পেয়ে দারুণ খুশি হয় সাবিদ-সাকিমা। শিশু দুটির চাচা আবদুল আজিজ বলেন, ‘নিজ পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাতেই অনেক হিমশিম খেতে হয়। এখন বাবা-মা হারানো সাকিমা-সাবিদের পেছনে ব্যয়ের দিকটা নতুন করে যোগ হওয়ায় সংসার চালাতে আরও কষ্ট হচ্ছে।’ কালীগঞ্জ ইউএনও সাদিয়া জেরিন বলেন, ‘ওই দুই শিশুর জীবনের গল্প খুবই কষ্টের। আমি নিজে বাড়িতে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের চাচার সঙ্গে কথা বলেছি। সাবিদ ও সাকিমার জন্য ঈদের উপহার পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, এতিম ওই দুই শিশুর জন্য দেশ ও বিদেশ থেকে বেশ কিছু হৃদয়বান মানুষ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এজন্য কালীগঞ্জ রূপালী ব্যাংকে সাকিমা-সাবিদ কল্যাণ তহবিল নামে একটি হিসাব খোলা হয়েছে। হিসাব নম্বর ৫৮৭৬০১০০০২৬৮৪, রূপালী ব্যাংক, কালীগঞ্জ শাখা, ঝিনাইদহ। এই তহবিলের টাকা সাকিমা ও সাবিদের পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজে খরচ করা হবে। কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কৌশিক খান বলেন, ‘সাবিদ-সাকিমা এখন এতিম। তাদের বাবা মারা গেছেন এবং মা থেকেও নেই। আমরা তাদের চাচাদের সঙ্গে কথা বলেছি যাতে শিশু দুটির সরকারি খরচে পড়াশোনা ও তাদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু করা যায়।’ এ বিষয়ে ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু জানান, এতিম ওই দুই শিশুর জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা হবে।