
স্টাফ রিপোর্টার :
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের কোটচাঁদপুর এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ( এজেন্ট) ইনচার্জ আহসানগীর অর্থলগ্নিকারি গ্রাহকের পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে। অতিরিক্ত মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক,নিয়োগকৃত কর্মচারী ও অর্থলগ্নিকারিদের কাছে এ টাকা হাতিয়ে গত ৯ আগষ্ট থেকে তিনি নিরুদ্দেশ হয়েছেন বলে অভিযোগে জানা গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
গ্রাহকদেও অভিযোগে জানাযায়, ২০২০ সালে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা চালু করে। এ এজেন্ট শাখার তত্ত¡াবধায়ক হিসেবে দায়-দায়িতগ্রহন করেন মহেশপুর উপজেলার কাকিলাদাঁড়ি গ্রামের আমিনুর ইসলাম শান্তির ছেলে আহসানগীর। এজেন্ট ব্যাংিকিং শাখা খোলার পর তিনি আল আরাফা ব্যাংকের কর্মচারি নিয়োগের নামে এলাকার বেকার যুবকদের অন্তত ২৮জনকে নিয়োগ দেন। এ নিয়োগ প্রদানে প্রার্থীদের কাছে জামানত হিসেবে ১-৩/৪ লাখ টাকা গ্রহন করেন। চাকরীতে নিয়োগকৃত এসব যুবকরা হচ্ছে অপারেশন ম্যানেজার জোবায়ের আলমের কাছে ৩ লাখ,নুরুন নাহারের ৩ লাখ,এনামুল হকের ১ লাখ,মোক্তার হোসেনের ১ লাখ, জাকির হোসেনের ১ লাখ,আল আমীনের ১ লাখ,শামীম হোসেনের ১ লাখ, জাকির হোসেনের ১ লাখ,সুজন হোসেনের ১ লাখ,চামেলী ৩ লাখ,আরিফা ৩ লাখ টাকাসহ অন্তত ২৮/৩০ জনতে চাকরী দেয়ার জন্যে বিভিন্ন পরিমানে টাকা নিয়েছেন। এসব যুবকদের কাজ ছিল এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিদের এই ব্যাংকের একাউন্ড খোলানো এবং লেন দেন করা। এসব যুবকদেও দায়িত্ব ছিল স্থানীয়ভাবে তাদের পরিচিত ও আত্ময়িস্বজনসহ বিভিন্ন লোকজনকে অধিক হারে লাভের কথা বলে ব্যাংকে একাউন্ট খোলানো,লেনদেন,ফিক্স ডিপোজিট করা ও পার্টনার বানানো ও অর্থ বিনিয়োগ করানো। ধুর্ত এজেন্ট আহসানগীর অর্থ লগ্নিকারিদের নাকি বলেন আমি ব্যাংকের শেয়ার কিনি,এবং বিভিন্ন লাভজনক কাজে বিনিয়োগ করি। তাই আমি যেভাবে ব্যবসায় মুনাফা অর্জন করি সেভাবে আপনাদেরও দিতে পারবো। এসব অর্থ লগ্নিকারিদের টাকা গ্রহনে স্ট্যাম্প করে দেয়া হয়। অর্থ্যাৎ চুক্তিপত্র করা হয়। এতে গ্রাহকদের বিশ্বাস আরো বেড়ে যায়। অধিক মুনাফা পাওয়ার আশায় অর্থ্যাৎ প্রতি লাখে ১০৫০-১১০০ টাকা মুনাফা পাওয়ার আশায় যেসব ব্যাক্তি এখানে তাদের টাকা লঘিœ করেন তারা হলেন, আল আমীন এক কোটি ৫৪ লাখ,মাকসুদুর রহমান ৩৬ লাখ,শাহ জাহান ১১ লাখ, হাফিজা হ্যাপী ১১ লাখ.আরিফ হোসেন ১৬ লাখ এবং তার এক প্রার্থীর চাকরীর জন্যে ৩ লাখ, লিটন ৬ লাখ,নির্মল ২ লাখ,আমীনুল ইসলাম
৩ লাখ,শান্তি ৫ লাখ,নয়ন ২ লাখ,জামাল ১ লাখ,নাজমুল ৪ লাখ,মোক্তার ৫ লাখ,আল আমীন ৬ লাখ,শামীম ৩ লাখ,নুর নাহার ৩ লাখ,হাসিব ২ লাখ,মারুফ ৩ লাখ,নাহিদা ২ লাখ,ইমরান ৩ লাখ,মোশারেফ হোসেন ১০ লাখ,জসিম ২ লাখ,জালাল হুজুর ৬ লাখ,লিটন ২ লাখ, হাসান ৬ লাখ,ফাতেমা ১ লাখ ৫০ হাজারসহ আরো অনেকে টাকা জমা দিয়েছেন। আর এসব টাকা সুচতুর এজেন্ট আহসানগীর আল আরাফাহ ব্যাংকের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে গ্রহন করলেও কুট কৌশলে নিজের ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠান গীর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এর একাউন্টে জমা করা হয়েছে। ব্যাংক সুত্রে জানা গেছে, এপযর্ন্ত (১৫০০)পনের শতাধিক গ্রাহক এখানে হিসাব খোলেন এবং ফিক্স ডিপোজিটসহ নানা ভাবে টাকা লগ্নি করেন । আহসানগীর এসব লগ্নিকারিদের বিশ্বাস বাড়িয়ে প্রদানকৃত টাকার স্ট্যাম্প করে দেন। টাকা জমা দেয়া ভুক্তভোগি ফাতেমা বেগম জানান, অনেক কষ্ট করে টাকাটা জোগাড় করে অপারেশন ম্যানেজার জোবায়ের আলমের কাছে জমা দিয়েছি। তখন আহসানগীর সাহেব ডেকে নিয়ে মুনাফার কথা বলে চুক্তি করিয়ে টাকাটা তার একাউন্ডে ট্রান্সফার করে নেন। কিন্তু টাকা জমার পরএকটি টাকাও লাভ পাইনি। এরই মধ্যে আহসানগীর নিরুদ্দেশ হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে আহসানগীর ও জোবায়ের আলমের নামে থানায় অভিযোগ করেছি।
আহসানগীরের স্ত্রী নাইস খাতুন বলেন,আমার স্বামী তার ব্যাবসা সম্পর্কে কিছুই বলতো না। এখন সমস্যা হয়েছে, মানুষ বাড়িতে আসছে তাই জানতে পারছি। সর্বশেষ ৮ আগষ্ট আমার সাথে কথা হয়েছে। তবে সে এখন কোথায় আছে বলতে পারবো না। এখন মানুষ হুমকি ধামকি করছে, নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আহসানের ভাই আলমগীর বলেন,১৪ বছর ধরে তার সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। তবে শুনছি লোকজনের টাকা নিয়ে নাকি পালিয়েছে।
এব্যাপারে আল আরাফাহ ব্যাংকের ঝিনাইদহ জেলা শাখার ম্যানেজার আসাদুজ্জামানের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন,ব্যাংকের এজেন্ট আহসানগীর এভাবে চলে যাওয়ায় ব্যাংকের গ্রাহকরা হতাশার মধ্যে পড়েছেন। এতে ব্যাংটির সুনাম ও বিশ্বস্থতা ক্ষুন্ন হয়েছে। তবে যেসব গ্রাহক ব্যাংকের একাউন্ডে টাকা রেখেছেন তাদের টাকা সে মারতে পারেনি। সে টাকা আরাফাহ ব্যাংকের হিসাবে আছে। গ্রাহক চাইলে যখন তখন টাকা নিতে পারে।
কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মঈন উদ্দিন বলেন,আল আরাফা ব্যাংকের ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছে। তবে কোন মামলা হয়নি। আমরা বলেছি আপনারা মামলা করলে আমরা ব্যবস্থা নেব। কিন্তু তারা মামলা করতে রাজি না। তারা গোপনে এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করছে বলে আমার কাছে বলেছে।